ঝিনাইদহে বাড়ছে বিয়ে বিচ্ছেদ, দিনে ৮ তালাক

ঝিনাইদহে আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তালাক বা বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা। নিমিষেই ভেঙ্গে যাচ্ছে ১৫ থেকে ২০ বছরের সংসার। এ জেলায় গড়ে প্রতিদিন ৮ তালাক বা বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে বলে ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। তবে নিকাহ রেজিস্টারদের ভাষ্যমতে তালাক বা বিয়ে বিচ্ছেদের এই হার অনেক বেশি।

ঝিনাইদহ জেলা রেজিস্টারের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহে ২০১৯ সালে জেলার ৬ উপজেলায় মোট বিয়ে হয়েছে ৭ হাজার ৮’শ ৪২ জনের। এরমধ্যে তালাক হয়েছে ৩ হাজার ৬৪ জনের। তালাকের দিক থেকে ছেলেরাই এগিয়ে রয়েছে। ওই বছরে উভয় পক্ষের সম্মতিতে তালাক হয়েছে ২৭৮ জনের। ছেলে একক ভাবে তালাক দিয়েছে ১৪৫৬ জনকে। আর মেয়ে তালাক দিয়েছে ১৩৩০ জনকে। হিসাব মতে তালাকের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা। এই উপজেলায় ২০১৯ সালে বিয়ে হয় ৭২৪টি। আর তালাকের ঘটনা ঘটে ৪২২টি।

তথ্য থেকে জানা গেছে, তালাকের সবচেয়ে বড় কারণ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ‘বনিবনা না হওয়া’। স্ত্রীর করা আবেদনে কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বামীর সন্দেহবাতিক মনোভাব, পরনারীর সঙ্গে সম্পর্ক, যৌতুক, দেশের বাইরে গিয়ে আর ফিরে না আসা, মাদকাসক্তি, ফেসবুকে আসক্তি, পুরুষত্বহীনতা, ব্যক্তিত্বের সংঘাত, নৈতিকতাসহ বিভিন্ন কারণ। আর স্বামীর অবাধ্য হওয়া, শ্বাশুড়ির সঙ্গে মনোমালিন্য, পরকীয়া, ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী না চলা, বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, সন্তান না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে স্ত্রীকে তালাক দিচ্ছেন স্বামী।

ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় বসবাসকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী আরটিভি নিউজকে জানান, আমার ১৫ বছরের সংসারে একটি মেয়ে রয়েছে।

ফেসবুকে স্বামীর পরকীয়া ধরে ফেলায় স্বামী আমাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। কিছুদিন পর তালাকের নোটিশও পাঠিয়ে দেন। কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি। এখন নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

উপশহর পাড়ার এক যুবক আরটিভি নিউজকে জানান, তার স্ত্রী সরকারী কর্মকর্তা। অফিসের বসের সঙ্গে পরকীয়া। বিষয়টি ধরে ফেলায় স্ত্রী আমাকে তালাক দিয়ে সেই বসকেই বিয়ে করেছে। ঘরে ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে আমি এখন অসহায়।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পৌর কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর ২০২১ সালের ৬ মাসের তথ্য দিয়ে আরটিভি নিউজকে জানান, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বিয়ে হয়েছে ৩৯১টি। আর তালাকের ঘটনা ঘটেছে ১৬৯টি। প্রতি মাসে ২৮ জনের তালাক হচ্ছে।

এছাড়াও পৌরসভার ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে ৬ মাসে একশটি বিয়ে হলেও তার অর্ধেক হয়েছে তালাক। এছাড়া জেলার ৬টি পৌরসভা, মানবাধিকার সংগঠন, মহিলা বিষয়ক অফিস, মহিলা সংস্থা ও জেলা জজ আদালতের লিগ্যাল এইড অফিসে প্রতিদিন তালাকের আবেদন জমা পড়ছে।

জেলা কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওবাইদুর রহমান আরটিভি নিউজকে জানান, করোনাকালে জেলায় তালাকের ঘটনা নেহাতই কম নয়। বিয়ের ঘটনা বৃদ্ধি না পেলেও তালাকের ঘটনা অহরহ ঘটছে।

Full Video


ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এটা দেখেছেন কি? দেখে নিন